কাজী ইয়াছিন ঃ বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার একটি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা চলছে মাত্র একজন প্রাইভেট শিক্ষক দিয়ে। ওই শিক্ষকের বেতন মাত্র ১ হাজার টাকা। কাগজ-কলমে শিক্ষার্থীর অভাব না থাকলেও ৫টি শ্রেণীতে মাত্র ২/৩ জন শিক্ষার্থী দেখা গেছে। আর শিক্ষকদের বেতন-ভাতা চালু রাখতে এ বছরেও পিএসসি পরিক্ষায় পার্শবর্তী একটি কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এনে পরীক্ষা দেওয়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে ওই মাদ্রাসাটির সহ-সভাপতি জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছেন। লিখিত অভিযোগ ও তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কচুয়া উপজেলার চান্দেরকোলা রহমানীয়া খানকা শরীফ স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসাটিতে কাগজে কলমে একজন প্রধান শিক্ষক ও ৩ সহকারী শিক্ষক থাকলেও ওই মাদ্রাসাটি চালাচ্ছেন মাত্র ১ হাজার টাকা বেতনের নুপুর নামের একজন প্রাইভেট শিক্ষক। অথচ প্রতিমাসে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নামে সরকারী ভাতা তোলা হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য আসা সরকারী বই বিক্রি করা হচ্ছে কেজি দরে। শিক্ষকদের ভাতা চালু রাখতে এ বছর পিএসসি পরীক্ষায় পার্শবর্তী মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলীগাতি ইউনিয়নের চোমরা কালুরহাট বাজারে অবস্থিত হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ) নুরানী হাফেজী কওমী মাদ্রাসার ৪ ছাত্রকে এনে পরীক্ষা দেওয়ানো হয়েছে। পিএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র কচুয়া উপজেলার খলিশাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কওমী মাদ্রসার পোশাকে ওই ৪ ছাত্রকে দেখা গেছে। আর এসব অনিয়ম ও দূর্ণীতির মূলহোতা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক শেখ কামরুজ্জামান এমন অভিযোগ এলাকাবাসির। সরেজমিনে ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসা ভবনের একটি কক্ষে নুপুর নামের একজন প্রাইভেট শিক্ষক ৪ জন অসম বয়সের শিক্ষার্থীকে নিয়ে বসে আছেন। এর মধ্যে একজন তৃতীয় ও একজন চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী বলে দাবী করলেও অপর ২জন নিজেরা কোন শ্রেণীতে পড়ে তাও জানাতে পারেনি। নুপুর এখানে মাত্র ১ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করে বলে জানান।মাদ্রাসার কাছে বাড়ি মাওঃ আমজাদ হোসাইন আজাদী জানান, নামেই এটি মাদ্রাসা। এখানে কোন ক্লাস হয় না। ছাত্র-ছাত্রী নেই। সরকারী বইগুলো বিক্রি করা হয় কেজি মেপে। অপর প্রতিবেশি মোঃ জাফর শেখ ও আল আমীন শেখ জানান, মাদ্রাসায় কোন ছাত্র-ছাত্রী নেই। নুপুর নামের একজন প্রাইভেট শিক্ষক মাঝে মাঝে এই মাদ্রাসাটি খোলে। তখন এলাকার কিছু ছেলে-মেয়েকে খাবার দেয়ার কথা বলে সে নিয়ে আসে। মাদ্রাসার স্থানীয় সহ-সভাপতি ও জমিদাতা মোঃ শেখ আব্দুল আলী জানান, অনেক শখ করে সওয়াবের আশায় ১৯৮২ সালে মাদ্রাসাটিতে জমি দান করে ছিলাম। আগে মোটামুটি ভালভাবে চললেও বর্তমানে প্রধান শিক্ষক শেখ কামরুজ্জামান এই মাদ্রাসাটি শুধু তার আয়ের স্থান হিসেবে দেখেছেন। এখানে কোন শিক্ষার্থী নেই। তাই নিরুপায় হয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেছি। এর আগেও স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করেছে। কিন্তু অজ্ঞাত করনে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শেখ কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান শিক্ষার্থী কম থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, আগামী বছর শিক্ষার্থী ভর্তি করে নিয়মিত মাদ্রাসাটি চালানো হবে।কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসমিন ফরহানা সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। খোজকবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।