বটিয়াঘাটা প্রতিনিধি ঃ খুলনার বটিয়াঘাটা থানার ওসি ও দুই দারোগার বিরুদ্ধে এক দরিদ্র কলেজ ছাত্রলীগনেতা ও কৃষক পরিবারের সন্তান আ’লীগনেতাকে গ্রেপ্তারের পর মধ্যযুগীয়ভাবে নির্যাতন এবং হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ উঠেছে। ওই দুই ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার এক রাত ও একদিন পর বিষয়টি স্বীকার করে থানা পুলিশ। প্রায় চার মাস আগে মৃত এক অজ্ঞাত নারীর দেহ উদ্ধার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামী করে জেলহাজতে প্রেরণ এবং পরবর্তীতে রিমান্ডে আনা হয়। এ ঘটনায় বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের সুখদাড়া গ্রামে নিরিহ মানুষের মাঝে আতংক ও চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন সুখদাড়া গ্রামের গৌরপদ মন্ডলের ছেলে এক সন্তানের জনক উত্তম মন্ডল (৩৮) স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য এবং একই গ্রামের সুকুমার সরকারের ছেলে আনন্দ সরকার সুরখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। এ ঘটনায় ওসি মাহাবুবুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, গ্রেপ্তারের পর ওই দুজনকে এমন নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা বর্ণনা করা যায় না। তাদের বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। শরীরের স্পর্শকাতর স্থানও এ নির্যাতন থেকে বাদ যায়নি। তাদের মাথার চুলও উপরে ফেলার চেষ্টা হয়। এখন তারা কারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। প্রস্রাব করতে গেলে তাদেরর রক্ত বের হয়। এটা দুঃখজনক। থানা পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বটিয়াঘাটার টেংরামারী এলাকা থেকে ২০/২২ বছরের অজ্ঞাতনামা নারীর লাশ উদ্ধার হয়। সে সময় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়। ওই ঘটনার প্রায় চারমাস পর এসআই জয়ন্ত কুমার হোড় মেডিক্যাল রিপোর্টের পর ৯ জানুয়ারি বটিয়াঘাটা থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গত ১৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩টায় পানখালী ফেরিঘাট এলাকা থেকে উত্তম মন্ডল ও আনন্দ সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডে আনা হয়। একদিন জিজ্ঞাসাবাদ পর তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। অবশ্য পুলিশ পানখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের কথা বললেও গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের স্বজন, প্রতিবেশীরা বলেছেন পুলিশ ১২ জানুয়ারি গভীর রাতে দুজনকে বাড়ি থেকে তুলে আনে। পরে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের দু’দিন পর তাদের গ্রেপ্তার দেখায়। এদিকে পিএসআই শেখ আহম্মদ কবির অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, উত্তম মন্ডল ও আনন্দকে বাড়ি থেকে নয়, পানখালি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের নির্যাতন করার অভিযোগও সঠিক নয়। হত্যার শিকার ব্যক্তির চারমাসে পরিচয় সনাক্ত না হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে সন্দেহভাজন হত্যাকারী সনাক্ত হলো -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই নারীর লাশ উদ্ধারের সময় ইউডি মামলা ছিল। পরে এটি হত্যা মামলা হয়েছে। তাদের সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু বক্কর শেখ বলেন, আমি ৮৩ সাল থেকে টানা এপর্যন্ত ইউপি সদস্য। প্রতিপক্ষরা ইর্ষান্নিত হয়ে অপ্রচার চালাচ্ছে। আমি বিএনপি করতাম ঠিকই,কিন্তু আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ হালদার বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক। পুলিশ যে দুজনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করেছে; তারা আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী, তারা কখনোই এমন কাজে জড়িত থাকতে পারে বলে এলাকার লোকজন মনে করেন না। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
??-??-????
21-01-2019